স্বনামধন্য একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকুরি করেন নাসির উদ্দিন (ছদ্মনাম)। বাস করেন মিরপুর এলাকায়। পরিবার নিয়ে একটি মাঝারি মানের ফ্লাটে ভাড়া থাকেন তিনি। জানালেন, প্রতি মাসে ভাড়া, সার্ভিস চার্জ, গ্যাস, বিদ্যুৎবিল সব মিলে তার পকেট থেকে চলে যাচ্ছে প্রায় ১৮ হাজার টাকা। মাসে ৪০ হাজার টাকা বেতন পেয়েও নিজের মতো চলতে পারছেননা তিনি। আক্ষেপ করে বললেন, “সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয় যখন মাসের শুরুতে বাড়িওয়ালা প্রায় অর্ধেক টাকা নিয়ে যায়” প্রায় একযুগ ধরে চাকুরি করেও তেমন কোন সঞ্চয় নেই তার। শুধু তাই নয় নাসির উদ্দিন জানালেন তার একমাত্র সন্তানকে স্কুলে পড়ানো, মাসের বাজার খরচ, পরিবারের অন্যান্য ব্যয়, নিজের আসা যাওয়ার ভাড়া সব মিলে প্রায় মাসেই তাকে ধার করে চলতে হচ্ছে। কথায় কথায় নিজেই হিসেব করে বললেন, গত এক যুগে প্রায় ২২ লাখ টাকা ভাড়া দিয়েছেন তিনি। অথচ তার নিজের বাড়ি হলে এই আয় দিয়েই স্বাচ্ছন্দে চলতে পারতেন তিনি।
এমন বাস্তবতা শুধু নাসির সাহেবের নয়, রাজধানী ঢাকাতে বাস করা বেশিরভাগ মধ্যবিত্ত পরিবারের চিত্র প্রায় একই। উচ্চ শিক্ষার ডিগ্রি নিয়ে ভালো চাকুরিও পেয়ে যান অনেকে তবে সংসার চালাতে গিয়ে হিমশীম খেতে হচ্ছে নানা বাস্তবতায়। মাসের শুরুতেই বেতনের সিংহভাগ বাড়িওয়ালার হাতে দিতে মন খারাপ হয় সবার। তবে বিকল্প কোন সহজ উপায় না থাকায় এটাকেই নিয়তি হিসেবে মেনে নিয়েছেন তারা। তার উপর বছর বছর ভাড়া বাড়ানোর প্রবণতায় আরো বিপাকে পড়তে হচ্ছে ভাড়াটিয়াদের। ইংরেজি মাসের শুরু মানেই ভাড়া বাড়ানোর নোটিশ যেনো অবধারিত ভাড়াটিয়াদের জন্য।
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ক্যাবের এক জরিপে উঠে এসেছে গেলো ২৫ বছরে ঢাকায় বাড়ি ভাড়া বেড়েছে প্রায় চারশ গুন। অন্যদিকে এই সময়ে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে দ্বিগুন। অর্থাৎ নিত্যপণ্যের চেয়েও দ্বিগুন হারে বেড়েছে বাড়ি ভাড়া। যা দিতে এখন হিমশীম খেতে হয় নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত কিংবা উচ্চবিত্তকেও। রাজধানীতে প্রায় ৮০ শতাংশ ভাড়াটিয়া যেনো অসহায় ২০ শতাংশ বাড়ির মালিকের কাছে।
আরেক জরিপে উঠে এসেছে, ঢাকার ২৭ ভাগ ভাড়াটিয়া আয়ের প্রায় ৩০ শতাংশ, ৫৭ ভাগ ভাড়াটিয়া প্রায় অর্ধেক, ১২ ভাগ আয়ের প্রায় ৭৫ শতাংশ ব্যয় করেন বাড়ি ভাড়া খাতে। সবমিলে চাকুরিজীবিদের সারা মাসের কষ্টের প্রায় অর্ধেকটাই চলে যাচ্ছে ভাড়ার পেছনে।
এমন পরিস্থিতিতে সবাই চায় ভাড়া না দিয়ে নিজের জন্য একটি ফ্লাট কিনতে। তবে তা হয়ত সবার জন্য সম্ভব হচ্ছেনা, কেউ কেউ সাহস নিয়ে ব্যাংক অথবা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় নিজের জন্য ফ্লাট বুকিং দিচ্ছেন। যে টাকা প্রতিমাসে ভাড়া হিসেবে দিতে হচ্ছে তার কিছুটা বেশি দিয়ে ধীরে ধীরে নিজের জন্য গড়ে তুলছেন একটি স্থায়ী নিবাস। বর্তমানে সরকারি সিদ্ধান্তে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সুদের হার কমিয়েছে। এক সময় হোম লোনের ক্ষেত্রে ১৫ থেকে ১৮ শতাংশ পর্যন্ত সুদ নেয়ার প্রবণতা থাকলেও তা এখন কমে নেমে এসেছে ৯ শতাংশে। কোন কোন ব্যাংক আবার ৭ থেকে ৮ শতাংশেও তার গ্রাহকদের হোমলোন দিচ্ছে।
বাংলাদেশে জন্মেছেন কিন্তু চাকুরি বা ব্যবসার সুবাদে বাস করছেন অন্য দেশে। এমন প্রায় এক কোটি প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। যাদের মধ্যে বেশিরভাগের স্বপ্ন নিজ দেশের রাজধানীতে একটি বাড়ি কিংবা ফ্লাট কেনার। তবে বাড়ির স্বল্পতায় বড় অংশটি এখন ঝুঁকছে রেডি ফ্লাটের দিকে। আবার অনেকেই আছেন যারা দীর্ঘদিন দেশের বাইরে থাকায় শহরের কোন এলাকায় ফ্লাট কিনবেন তা বুঝতে পারছেন না। আশা করি আমাদের এই লিখা আপনাকে রাজধানী ঢাকার কোথায় ফ্লাট কিনবেন সেই উত্তর পেতে সহায়তা করবে। এই অংশে আমরা যারা উচ্চবিত্ত তারা যেই এলাকায় ফ্লাট কিনতে পছন্দ করেন সেই বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চাই। সাধারণত ফ্লাট কেনার ক্ষেত্রে এলাকার অবস্থান, যাতায়াত ব্যবস্থা, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, বাজার ইত্যাদি বিষয় মাথায় রেখে একজন ক্রেতা সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। আমাদের এই লিখা আপনাকে আপনার ভবিষৎ বাসস্থান কোথায় হবে তার একটি গাইডলাইন দিতে পারবে।
ধানমন্ডি:
রাজধানী ঢাকার অন্যতম জনপ্রিয় আবাসিক এলাকার নাম ধানমন্ডি। যেই এলাকাটিতে রয়েছে ধানমন্ডি লেক। বাড়ি থেকে বের হয়ে লেকের পাশে হাটা বা ব্যয়াম করা যাবে এমনটা ভেবে অনেকেই এখানে ফ্লাট কিনতে উৎসাহিত হন। তবে উচ্চবিত্তের এলাকা হিসেবে পরিচিত এলাকাটিতে ফ্লাটের দাম ঢাকার অন্য যেকোন এলাকার চেয়ে বেশি। সবচেয়ে বড় কথা চাইলেও এখানে ফ্লাট পাওয়া যায়না। তবে ধানমন্ডির আশপাশের এলাকাগুলোতে ইদানিং তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন ফ্লাট।